স্বদেশ ডেস্ক:
রমজানের আবশ্যক পণ্য ছোলা ইউক্রেন কিংবা রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয় না। আমদানি হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে। এর পরও গত ১৪ দিনে পণ্যটি খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে কেজিতে ১৭ টাকা। এমনও নয় যে রোজা চলে আসায় ছোলা কিনতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, রোজার বাকি আরও এক মাস।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। তাই বেড়েছে ছোলার দাম। খাতুনগঞ্জের ছোলার আড়তদার বেলায়েত হোসেন দাবি করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। তাই ছোলার দাম বেড়েছে। এই দুদেশের কোনোটিতেই ছোলার উৎপাদন নেই, তবুও কেন যুদ্ধের অজুহাত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়তি, তাই বুকিং দরও বেড়ে গেছে। আমাদেরও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
ক্যাবের অভিযোগ, ছোলার দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের এটি একটি বাহানা। যে কোনো ছুতায় তারা পণ্যের দাম বাড়াবেই। ক্যাবের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে ছোলার দাম বাড়াচ্ছেন। অথচ এই দুই দেশ থেকে পণ্যটি দেশে আমদানি হয় না। ছোলার উৎপাদনও ওই দুই দেশে হয় না। বিষয়টি প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। বুকিং দর বাড়ার কারণে দাম বাড়ছে- ব্যবসায়ীদের এমন দাবির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বুকিং মানি পরিশোধ করা হয়েছে কয়েক মাস আগে। তখনতো ডলারের দাম বৃদ্ধি কিংবা যুদ্ধের শুরু কোনোটাই হয়নি।
অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও বাংলাদেশে কয়েকটি দেশ থেকে সারাবছর কম বেশি ছোলা আমদানি করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন মাস আগেও ছোলার কেজি ছিল পাইকারি সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা। গতকাল একই বাজারে সেটির দাম ৬৫ টাকা। খুচরা বাজারে তার দাম পড়ছে ৭২ টাকা পর্যন্ত।
জানা যায়, বাংলাদেশে মূলত ৯০ শতাংশ ছোলা আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে। এর মধ্যে তিনটি সাইজের ছোলা সেখান থেকে আসে। এর বাইরে ইথিওপিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মেক্সিকো থেকে কম বেশি ছোলা আমদানি করা হয়।
গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন আড়তে এখন মজুদ আছে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা। আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা ছোলা বিক্রি করতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ ছোলা অস্ট্রেলিয়ার। অস্ট্রেলিয়ান ছোলার মধ্যে নিম্নমান, মাঝারি ও উচ্চমান- তিনটিই আছে।
খাতুনগঞ্জের ছোলার আড়তদার পরিশোষ দে আমাদের সময়কে বলেন, এখন সরবরাহ আছে অস্ট্রেলিয়ার ছোলা। এর মধ্যে যেটা নিম্নমানের (ছোট দানা) সেটার দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মাঝারি মানের ছোলা ৬২ টাকা এবং উন্নতমানের ছোলা ৬৫ টাকায় বিক্রি করছি আমরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, ২০২১-এর জুলাই থেকে ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশে অস্ট্রেলিয়া ও ইউএই থেকে ছোলা আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার টন। এখনো আসার পথে রয়েছে আরও এক লাখ টন ছোলা। আমদানিকারকরা বলছেন, আগে যেসব ছোলা বুকিং দেওয়া হয়েছিল সেগুলো অধিকাংশই চলে আসছে। নতুন করে এলসি করা ছোলার চালান রমজানের আগে খাতুনগঞ্জে পৌঁছাবে।
ছোলার আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, এবারও আমার প্রতিষ্ঠান ৩০ হাজার টন ছোলা আমদানি করবে। এর মধ্যে কিছু ছোলা চলে এসেছে। বাকি ছোলা রমজানের ১০-১৫ দিন আগে আসার কথা রয়েছে। যদি বন্দরে পণ্য খালাসে কোনো সমস্যা না হয় তাহলে ওই সময়ে সব ছোলা দেশে আসবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, অযৌক্তিকভাবে পণ্যের বাড়তি দাম রাখলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রোজার আগেই ক্যাব, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়েই নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।